কবিতার কক্ষপথে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জয় গোস্বামী বললেন, এখন আমি কবিতা লেখা শিখছি
শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কোনো কবিকে যদি প্রশ্ন করা হয়, কবিতা কেন লেখেন? এই প্রশ্ন করা মেয়েদের বয়স জিজ্ঞাসা করার মতো। বলেছিলেন পাবলো নেরুদা। জীবনের চাওয়া পাওয়া , কিম্বা না পাওয়া এমনকি প্রতিটি মুহূর্তের অনুভূতি ভিন্ন ভিন্ন। সেই অনুভূতিকে যখন কোনো শিল্পীমন লিপিবদ্ধ করেন সেটাই কবিতা। কবিতার প্রতিটি শব্দের ক্ষমতা কতটা তার প্রমাণ মেলে পূর্ব ইউরোপের কবি হেরবেট, মিউশকে যখন জন্মভূমি ছেড়ে রাজরোষে দেশ ছাড়তে হয়। স্ট্যালিন জমানায় কবি সাহিত্যিকদের নাকি বলা হত শুঁয়োপোকা। এজরা পাউন্ডের বক্তব্যটিও মজার। তিনি বলেছেন কোনো কবি কতটা পরিশ্রমী ও আন্তরিক তার প্রমাণ তার আঙ্গিকগত চেতনায়। দরকার অনেকটা অলস সময়।
সেই অলস মুহূর্ত যতই শয়তানের কারখানা বলা হোক সেটি কিন্তু কবিতারও প্রজনন ক্ষেত্র। বাংলার মাটিতে সহজে ফসল ফলে। তাই বোধহয় অলস সময় বাঙালি পায় সংস্কৃতি চর্চায়। যে বাঙালি জীবনে একবার অন্তত একটি কবিতা লেখেননি তিনি আগমারকা বাঙালির তালিকায় স্থান পাওয়া মুশকিল। চিলির কবি নীকানর পাররা বলেছিলেন, তোমার যা খুশি লেখো। সেটা যেন সাদা কাগজের থেকে উৎকৃষ্ট হয়। রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্র সংকলনে ইন্দিরাদেবীকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, কবিতা আমার বহুকালের প্রেয়সী।,,,,,, আমার চিরকালের যথার্থ আপনার মধ্যে প্রবেশ করি, আমি বেশ বুঝতে পারি এই আমার স্থান। জীবনে জ্ঞাতসারে এবং অজ্ঞাতসারে অনেক মিথ্যাচরণ করা যায় কিন্তু কবিতায় কখনও মিথ্যা কথা বলিনে সেই আমার জীবনের সমস্ত গভীর সত্যের একমাত্র আশ্রয়স্থল। তাই বোধহয় কবিদের চারণভূমি কবিতার কক্ষপথে সংগঠনের দ্বিতীয় বর্ষের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে কবি জয় গোস্বামী বলেন , আমি আমার কবিতা লেখার পঞ্চাশতম বর্ষে এসে স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছি কবিতা কাকে বলে সেই সম্পর্কে পড়াশুনো করব বলে। ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্য টাকার বিনিময়ে যে সাহিত্য চর্চা করেছি সেখানে নির্ভেজাল কবিতা লিখতে পারিনি।তবু আপনাদের কাছে কবি হিসেবে স্বীকৃতি আমার উপরি পাওনা। আমি বরং এই সংগঠনকে সাধুবাদ জানাই যাঁরা জীবন যুদ্ধে অন্য পেশায় ব্যস্ত থেকে কিম্বা অবসরের পরে কবিতা চর্চা করছেন তাঁদের প্রকাশ্যে এনে স্বীকৃতি ও সম্মান জানানোর জন্য! এমন মহৎ কাজ আমি করে উঠতে পারিনি। এক গৃহবধূ সংসারের হাল সামলে নিজের জন্য একটু সময় বার করে মনের কথাটুকু লিপিবদ্ধ করেন সেটা তো স্মরণে রাখার মত। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগেই তিনি অবশ্য শর্ত রাখেন রাজ্যের সমসাময়িক ঘটনাবলী সম্পর্কে কিছু বলবেন না।
কবিতার কক্ষপথে সংগঠনের দ্বিতীয় বর্ষে প্রকাশিত হলো কবিতা সঙ্কলন। বাছাই কমিটির বিচারে বহু রচনার মধ্য থেকে ১৩০ জন কবির কবিতা ও ৬ টি গল্প নিয়ে আলোর বেনু বার্ষিক সংখ্যা প্রকাশিত হলো। এমনটাই জানান পত্রিকার সভাপতি মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী। পত্রিকার সম্পাদক সুপর্ণা চক্রবর্তী বলেন, মাত্র দুবছরে আমাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ছ শো।শুধু সংস্কৃতি চর্চা নয়, সামাজিক কাজেও আমরা বছরভর কাজ করি । এদিনের অনুষ্ঠানে বেহালার এক সমাজসেবী সংগঠনের হাতে দুটি হুইল চেয়ার তুলে দেওয়া হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, নবীন প্রবীণ লেখকদের রচনায় সমৃদ্ধ এবারের ১৩৬ পৃষ্ঠার বইটি কবি জয় গোস্বামীর হাত দিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করিয়ে আমরা তৃপ্ত। গর্বিত। দক্ষিণ কলকাতার সুজাতা সদনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবি সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের উপস্থিতি ছিল বেশ ভালোই।
ছবি : সফল ভট্টাচার্য














Comments
Post a Comment